বর্তমানে সবাই ফ্রিল্যান্সিং করে টাকা আয় করতে চায়। আর যদি খুব সহজ একটি স্কিল কাজে লাগিয়ে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করা যায় তাহলে কিন্তু খারাপ হয় না, তাইনা? ডাটা এন্ট্রি এমনই একটি স্কিল যার মাধ্যমে একদম সহজে আপনি ফ্রিল্যান্সিং জগতে পা রাখতে পারবেন এবং আয় শুরু করতে পারবেন। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশের ফ্রিল্যান্সাররা হাজার হাজার টাকা আয় করছে শুধুমাত্র এই একটি স্কিল কাজে লাগিয়ে।

আজকের এই ব্লগটিতে আমরা আলোচনা করবো সেই সবকিছু নিয়ে যা আপনার ডাটা এন্ট্রি দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করার রাস্তাটা সহজ করে দিবে এবং একটি রোডম্যাপ প্রদান করবে। এই ব্লগটিতে আপনি জানতে পারবেন, ডাটা এবং ডাটা এন্ট্রি কী, ফ্রিল্যান্সিং কী ও অনলাইন জগতে কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং করতে হয়, ডাটা এন্ট্রি দিয়ে কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং করবেন, কিভাবে রপ্ত করবেন প্রয়োজনীয় স্কিল, ডাটা এন্ট্রির ডিমান্ড কেমন এই সবকিছু নিয়ে। পাশাপাশি আমরা ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে কিভাবে অ্যাকাউন্ট ক্রিয়েট করতে হয়, ডাটা এন্ট্রি দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং এর কিছু টিপস ও স্ট্র্যাটেজি, করণীয় সম্পর্কে জানবো। তাহলে চলুন শুরু করা যাক!
ডাটা এবং ডাটা এন্ট্রি কী?
শুরুতেই জেনে নেই ডাটা এবং ডাটা এন্ট্রি কী!
ডাটা কী?
ডাটা (Data) হচ্ছে যেকোনো বিষয়ের উপর কোনো তথ্য বা ইনফরমেশন। এই তথ্য যেকোনো কিছু হতে পারে। যেমন: ছবি, মোবাইল নং, ইমেইল, টেক্সট ইত্যাদি। এই তথ্যগুলো সাধারণত সংরক্ষণ করে রাখা হয় পরবর্তী কোনো কাজের জন্য।
ডাটা এন্ট্রি কী?
ডাটা এন্ট্রি হলো যেকোনো ডাটাকে ডিজিটাল ফরম্যাটে কনভার্ট করা বা সংরক্ষণ করার প্রক্রিয়া। এই কাজের মাধ্যমে বিভিন্ন উৎস (অডিও, ভিডিও, কাগজপত্র) থেকে ডাটা সংগ্রহ করে কোনো ডিজিটাল মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হয়। সাধারণত ডাটা এন্ট্রির কাজ করা হয় মাইক্রোসফট ওয়ার্ড বা এক্সেলে। ডাটা এন্ট্রির প্রধান লক্ষ্য ডাটাকে সঠিকভাবে গোছানো এবং সহজলভ্য রাখা।
ডাটা এন্ট্রি স্পেশালিস্ট কারা?
ডাটা এন্ট্রি স্পেশালিস্ট এমন একজন প্রফেশনাল ব্যক্তি যে সঠিকভাবে এবং দক্ষতার সাথে ডাটা এন্ট্রির বিভিন্ন কাজ করে থাকে। একজন ডাটা এন্ট্রি স্পেশালিস্ট এর টাইপিং দক্ষতা থাকে এবং বিভিন্ন সফটওয়্যারে পারদর্শী হয়ে থাকেন।
একজন ডাটা এন্ট্রি স্পেশালিস্ট এর কাজ হয়ে থাকে-
- ডাটা ইনপুট: বিভিন্ন উৎস থেকে ডাটা সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট সিস্টেমে ইনপুট দেওয়া
- ডাটা যাচাই: ডাটার নির্ভুলতা যাচাই করা
- ডাটা রক্ষণাবেক্ষণ: একজন ডাটা এন্ট্রি স্পেশালিস্ট নিয়মিত ডাটা আপডেট ও রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকেন
ফ্রিল্যান্সিং কী?
ফ্রিল্যান্সিং এর সহজ অর্থ মুক্ত পেশা বা মুক্তভাবে কাজ করা। যখন কেউ নিজের সময়মতো, নিজের ডিভাইস দিয়ে মুক্তভাবে কোনো কাজ করে এবং বিনিময়ে শুধু সেই কাজের জন্য পারিশ্রমিক গ্রহণ করে, এই ধরনের কাজকে বলা হয় ফ্রিল্যান্সিং।
বর্তমানে বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক কর্মসংস্থানের চাহিদা পূরণ হচ্ছে বিভিন্ন সেক্টরে ফ্রিল্যান্সিং করার মাধ্যমে। ঘরে বসে আয় করার সুযোগ এবং কাজের ফ্লেক্সিবিলিটির জন্য এই পেশা ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এটি এমন একটি পেশা যেখানে কাজ করার কোনো ধরাবাঁধা সময় নেই। আপনার যখন ইচ্ছা, যেখানে ইচ্ছা কাজ করতে পারেন। সাধারণ চাকরি থেকে এখানে আরেকটি বিষয়-এর ভিন্নতা আছে। সেটি হলো কাজের স্থান। ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) এর জন্য নির্দিষ্ট কোনো অফিস নেই। আপনি বাসায় বসে কাজ করতে পারবেন নিজের পছন্দের সময়ে।
বিভিন্ন সেক্টরে ফ্রিল্যান্সিং করে টাকা আয় করা যায়। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে সহজ যে উপায় এবং অনেকেরই পছন্দের তা হলো— ডাটা এন্ট্রি। ডাটা এন্ট্রি দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করে কোনো ইনভেস্টমেন্ট ছাড়াই, শুধু কম্পিউটার ও ইন্টারনেট এর মাধ্যমে অনেকে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। আমরা এই ব্লগটিতে ধীরে ধীরে জানবো কিভাবে ডাটা এন্ট্রি দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে যাত্রা শুরু করতে পারবেন এবং একজন সফল ডাটা এন্ট্রি স্পেশালিস্ট হতে পারবেন।
ডাটা এন্ট্রি দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং
ডাটা এন্ট্রি দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করা বেশ জনপ্রিয়। ঘরে বসে ডাটা এন্ট্রির স্কিল কাজে লাগিয়ে আপনি হাজার হাজার টাকা আয় করে স্বাবলম্বী হতে পারবেন। তবে ডাটা এন্ট্রি দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং এ শুধু ডাটা এন্ট্রির কাজ নয় বরং লিড জেনারেশন, রিসার্চ ইত্যাদি এডভান্সড কাজও হয়ে থাকে।
অনলাইনে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেস আছে যেখানে বিভিন্ন মানুষ একত্রিত হয়। একদল থাকে যারা নির্দিষ্ট কোনো এরিয়াতে সার্ভিস চাচ্ছেন এবং আরেকদল থাকেন যারা ওই এরিয়াগুলোতে দক্ষ হয়ে থাকে। মার্কেটপ্লেসে যারা কাজটিতে দক্ষ তারা সেটি বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশ করে। অথবা কিছু মার্কেটপ্লেসে ক্লায়েন্ট-ই বিজ্ঞপ্তি প্রদান করে। তারপর যারা কাজটিতে দক্ষ তারা যোগাযোগ করে ক্লায়েন্ট এর সাথে এবং কাজটি সম্পন্ন করে দেয়। এবং ক্লায়েন্ট নির্দিষ্ট অর্থ প্রদান করে।
এইসব মার্কেটপ্লেসগুলোতে আপনি ডাটা এন্ট্রি রিলেটেড সার্ভিসগুলো অফার করে প্রতি মাসে ঘরে বসে আয় করতে পারবেন।
ফ্রিল্যান্সিং জগতে ডাটা এন্ট্রি এর ডিমান্ড কেমন?
মার্কেটিং থেকে শুরু করে প্রতিটি সেক্টরে আমরা বিভিন্ন ডাটা কালেক্ট করে থাকি। হতে পারে, কাস্টমারের ডাটা, কম্পিটিটরের ডাটা কিংবা অন্য যেকোনো কিছু। এসব ডাটা বা লিড প্রতিটি বিজনেসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই শুধুমাত্র ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটে নয়, লোকাল মার্কেটেও এই ডাটা এন্ট্রি বা লিড জেনারেশন এর চাহিদা ব্যাপক।
অনলাইন পোর্টাল টেকনাভিও অনুযায়ী, ২০২২ – ২০২৭ সালের মধ্যে ডাটা এন্ট্রি আউটসোর্সিং রিলেটেড কাজগুলোর চাহিদা ১৮৬ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বৃদ্দি পাবে। টাকায় হিসেব করলে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ২১৮৮ কোটি টাকা!
আপওয়ার্ক কিংবা ফাইভারের মতো জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেসগুলোতে গেলেই আপনি বুঝতে পারবেন এই সেক্টরের ডিমান্ড কেমন। এইসব মার্কেটপ্লেসে টপ রেটেড ফ্রিল্যান্সার থেকে শুরু করে লেভেল -১, লেভেল -২ ফ্রিল্যান্সারদেরও আয় খুবই ভালো। একজন ফ্রিল্যান্সার এই সেক্টরে ঘণ্টায় ১০ ডলার থেকে ২৫ ডলার পর্যন্ত আয় করতে পারে এক্সপেরিয়েন্স ও কাজের ধরন অনুযায়ী।
যেহেতু শিক্ষাগত যোগ্যতা এই পেশায় খুব বেশি প্রয়োজন হয় না, বাংলাদেশের মতো জায়গা থেকেও সমগ্র বিশ্বে ভালোভাবে ডাটা এন্ট্রি ক্যারিয়ার গড়া যায়। আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ইন্ডিয়া বা পাকিস্তান ডাটা এন্ট্রি জবে সমগ্র বিশ্বে বেশ ভালো পজিশনে আছে।
কেন ডাটা এন্ট্রি দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করবেন?
বিভিন্ন কারণে আপনার ডাটা এন্ট্রি দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করা উচিত।
এই স্কিল আয়ত্ত্ব করা সহজ
আপনি খুব সহজে ডাটা এন্ট্রির সাথে সম্পর্কিত স্কিলগুলো আয়ত্ত্ব করতে পারবেন। এই কাজের জন্য কোনো বিশেষায়িত ট্রেনিং এর প্রয়োজন হয়না। অনলাইনে বিভিন্ন কোর্স থেকে ইচ্ছাশক্তি থাকলে খুব কম সময়ের মধ্যে বেসিক জিনিসগুলো শিখে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করে দিতে পারবেন।
ব্যাপক চাহিদা
যেহেতু প্রতিটি ব্যবসার জন্য ডাটা বা ইনফরমেশন খুব গুরুত্বপূর্ণ, কোম্পানিগুলো প্রতিনিয়ত ডাটা কালেক্ট করে থাকে বিভিন্ন উপায়ে। আর এই ডাটা অর্গানাইজ বা এন্ট্রি দেওয়ার জন্যও তো মানুষ প্রয়োজন। তাই এই সেক্টরে ফ্রিল্যান্সারদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
সাধারণ সরঞ্জাম
শুধুমাত্র ইন্টারনেট সংযোগ ও কম্পিউটার থাকলেই ডাটা এন্ট্রির কাজটি শুরু করা যায়। এছাড়া এই কাজে কোনো জটিল সফটওয়্যারেরও ব্যবহার নেই। বেসিক কিছু সফটওয়্যারের ব্যবহার জানলেই যথেষ্ট।
ফ্লেক্সিবিলিটি
যেকোনো ফ্রিল্যান্সিং এর কাজেই থাকে ফ্লেক্সিবিলিটি এবং নিজের মতো করে কাজ করার স্বাধীনতা। আপনি যেকোনো জায়গায় বসে শুধুমাত্র ডিভাইস, ইন্টারনেট কানেকশন এর মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবেন। আপনি নিজের ইচ্ছা মতো প্রজেক্টস নিতে পারবেন এবং বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রির সাথে কাজ করার সুযোগ পাবেন।
বিজনেস গ্রোথ
যেহেতু আপনি ফ্রিল্যান্সিং করবেন তাই আপনি আপনার সময় এবং ইচ্ছা অনুযায়ী ফ্রিল্যান্সিং এর সার্ভিস এক্সপেন্ড করতে পারবেন। আপনি চাইলে কিছু মানুষ হায়ার করে আপনার সাথে রাখতে পারবেন যারা আপনাকে সাহায্য করবে এবং বিজনেস গ্রোথে ভূমিকা রাখবে। তাছাড়া আপনার এক্সপিরিয়েন্স বৃদ্ধির সাথে সাথে এই সেক্টরে আয়ও বাড়বে।